¬¬কাল স্রোতে যে স্মৃতির আয়নায় ধুলোর মেঘ জমেছিল হঠাৎ যেন কোন অজানা বাতাসের ঝাঁপটায় তা সরে গেল।আজ অনেক দিন পর তাই তোমাকে লিখতে বসলাম।আজ থেকে চার বছর আগে যখন তুমি হঠাৎ করে সব কিছু ছেড়ে সবাইকে কাদিয়ে আর আমাকে নিঃস্ব অসহায় করে চলে গেলে।সারাদিন তোমাকে বলার জন্য যত্ন করে তুলে রাখা সব কথা জমতে শুরু করল তোমার দেয়া ডাইরির হলদে পাতায়।তারপর অনেক দিন কেটে গেল।আস্তে আস্তে তোমাকে বলার মত কথা কমে যেতে শুরু করলো।একদিন অবাক হয়ে লক্ষ করলাম তোমাকে বলার মত আর কিছুই নেই।কত নিষ্ঠুর আমি, আস্তে আস্তে তোমাকে পুরোপুরি ভুলে গেলাম।আজকে এই বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যাটা হঠাৎ করে আবার সব মনে করিয়ে দিল।জানো আজকের সন্ধ্যাটা ঠিক সেদিনের সেই সন্ধার মত, যে দিন আমাদের প্রথম দেখা হলো।মনে আছে সেই আষাঢ়ের মাঝামাঝি দিনটার কথা? সারা দিন ধরে সেদিন বৃষ্টি ঝর ছিল।একদম শেষ সন্ধ্যায় ঝিরঝির করে ঝরা বৃষ্টির মাঝে তুমি আর আমি একই বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে অটোরিক্সা খুজ ছিলাম।যখন দেখলাম দুজনেই একই জায়গায় যাওয়ার জন্য অটোরিক্সা খুজছি তখন হুট করে তুমি আমার দিকে তাকালে।তোমার সেই বৃষ্টি ভেজা মুখটা আজও আমার পরিস্কার মনে আছে।শেষ পর্যন্ত তুমিই আমার আগে অটোরিক্সা পেয়ে গেলে।আমার হতাশ মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি যখন আমাকে লিফট দাওয়ার প্রস্তাব দিলে তখন সত্যি অনেক লজ্জালা গছিল।কিন্ত দেরি হয়ে যাচ্ছিল তাই তখন আমি না করতে পারিনি। সেই সন্ধ্যাটা ছিল আমার জীবনের সব চেয়ে সুন্দর সন্ধ্যা। সৃষ্টিকর্তা মানুষের এই ছোট্ট জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত তৈরি করে দেন যা পারে তার ছোট্ট জীবনের অসংখ্য অপূর্ণতাকে পুরণ করে দিতে। মনে আছে তোমার সেই সন্ধ্যায় ঠাণ্ডা বাতাস আর ছিটে আসা বৃষ্টির কনায় দুজন দুদিকে ফিরে বসে ছিলাম। দুজনের মাঝে মিষ্টি এক নিরবতা। তুমিই প্রথম কথা বললে। সামান্য কিছু কথাবার্তা। জানো সে দিনের প্রত্যেকটি কথা আজ এতো বছর পরও আমার স্পষ্ট মনে আছে। সে দিন তুমি যখন আমার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলে। আমার মনটা এতো খারাপ হয়ে গেল। ভাবলাম তোমার সাথে হয়ত আর কোন দিন দেখা হবেনা। কিন্তু ঠিকই আমাদের আবার দেখা হল। সে দিন তোমাকে দেখে আমার এতো ভাললেগে ছিল। তোমার মিষ্টি হাসি, তোমার কথা বলার ঢঙ। জানো আমি মুঘ্ধ চোখে তোমাকে দেখ ছিলাম। কোন ছেলে যে এত সহজে আমার মন কেড়ে নিতে পারবে তা তোমার সাথে দেখা না হলে কোন দিন বিশ্বাস করতাম না। এবার কিন্তু তুমি আমাকে হারালে না, আমার ফোন নাম্বার রেখে দিলে। মনে আছে তোমার? প্রতিরাতে তুমি আমাকে ফোন করতে। প্রথম প্রথম নানা অজুহাত দিয়ে ফোন করতে টুকটাক কথা বলে রেখে দিতে। তখন আমার এতো হাসি পেত। তারপর আস্তে আস্তে আমাদের ফোনে কথা বাড়তে লাগল। কতদিন কথায় কথায় রাতপার হয়ে ভোর হয়ে যেত তাও আমাদের কথা শেষ হত না। আমাকে দেখার জন্য তুমি প্রতিদিন ইচ্ছে করে আমার ভার্সিটির সামনে দিয়ে অফিস শেষ করে বাড়ি যেতে। যদি একটু দেখা হয় সেই আশায়। এরপর থেকে আমরা রোজ দেখা করা শুরু করলাম। প্রায় প্রতি দিন রাত করে বাড়ি ফিরে মার বকা খেতাম। তোমার মনে আছে? কি সুন্দর ছিল সেই সব সন্ধ্যা আর রাত গুলো। বৃষ্টির রাতে মেঘ ঢাকা অন্ধকার আকাশের নিচে দুজনে হাত ধরাধরিক রেকত কাক ভেজা হয়েছি। একবার তোমার অনেক জ্বর হল। তখন আমি ঠিক করলাম আমরা আর কখনও বৃষ্টিতে ভিজব না। কিন্তু তুমি কথা শুনতে না, ঠিকই বৃষ্টি নামলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে খোলা আকাশের নিচে। কত সুন্দর ছিল আমাদের জীবন। সুন্দর কিছু মুহূর্ত, এক ঝাক স্বপ্ন, নির্ঘুম জেগে থাকা ভালবাসাময় অসংখ্য রাত। সব কেড়ে নিয়ে গেল একটি সড়ক দুর্ঘটনা। তোমার আর আমার বিয়ের প্রস্তাবটা যখন সবাই মেনে নিল ঠিক তখনি এক রাশ সপ্নময় স্মৃতি রেখে আর আমাকে আমাকে গভীর কান্নার স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে হারিয়ে গেলে বহু দূরে। কত দিন হয়ে গেল তোমাকে দেখি না। যেই আমি একদিন তোমাকে না দেখে থাকতে পারতাম না, দেখ সেই আমি কিভাবে সব সামলে নিয়েছি, নিজেই অবাক হই, যখন দেখি সব স্মৃতি আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে গেছে কিন্তু জানো যখনই এরকম কাকভেজা বৃষ্টিসন্ধ্যায় মেঘলা আকাসের দিকে চোখ পরে। তখন তোমার মুখটা একদম স্পষ্ট মনে পরে। বুক মুচড়ে আসা কান্না আমি সামলাতে পারি না। আমি অসহায় এই কান্না সামলানোর উপায় তো আমার জানা নেই। কাল আমার বিয়ে। কালকের হলুদ সন্ধ্যার পর থেকে সারা শরীর থেকে আসা কাচাহলুদের ঘ্রাণ বাড়ে বাড়ে তোমার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমার গা থেকে আসা কাচা হলুদের ঘ্রাণ তোমার খুব প্রিয় ছিল। তোমার মনে আছে? তুমি সব সময় বলতে আমি যখন বিয়ের দিন বউ সাজতে পার্লারে যাব তখন তুমি গাড়ি নিয়ে গিয়ে পার্লারের সামনে বসে থাকবে আমাকে সবার আগে বউয়ের সাজে দেখতে। বলো কাল যখন আমি বউ সেজে বের হব তখন কি আমার এসব ভেবে কান্না আসবে না? তখন কিভাবে আমি কান্না সামলা বো? আজ মনে হচ্ছে সময়ের সাথে কিছু পরিবর্তন হয়নি। আজকে ঠিক প্রথম দিনের মতই অনুভব করছি তোমাকে হারানোর ব্যথা। কাল আমি অন্যের হতে চলছি। এক শীতের রাতে পরম ভালবাসায় তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার কানেকানে যে কথা দিয়ে ছিলাম যে ‘আমি শুধু তোমার, জীবনেও অন্যকারো হতে পারব না’ সেই কথা আমি রাখতে পারলাম না। নিজের অজান্তের কখন যে সমাজের নিয়মের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে ফেলেছি জানি না। আজকের পরে হয়ত আর কোনদিন তোমার কাছে লেখা হবে না। তোমার দেয়া ডাইরি ড্রয়ারে তালাবধ্য করে কাল চলে যাচ্ছি অন্যের বাড়ি বউ হয়ে। জানি এসব অর্থহীন। তাও কালকের পরে তোমার সাথে থাকা এই ছোট্ট যোগাযোগটিও বিছিন্ন হয়ে যাবে। আমি নিষ্ঠুর অপরাধী, তোমাকে দেয়া সেই কথা আমি রাখতে পারিনি। ক্ষমা চাওয়ার কোন ভাষাও আমার জানা নেই। আজ এই শেষ লেখায় শুধু এটুকুই বলতে চাই, তুমি যেখানেই থাকো যেমনই থাকো ভাল থেকো। জানি কোন দিন তোমাকে ভুলতে পারবনা কোন দিন ভুলতে চাইও না। যদি জীবনের এই অনন্ত চলার পথে হঠাৎ করে তোমাকে মনে করে সীমাহীন বেদনায় ডুকরে কেঁদে উঠি, তখন পারলে ক্ষমা করো এই অপরাধীকে।এই অপরাধী আজও শুধু তোমাকেই ভালবাসে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নৈশতরী
কিছু এলোমেলোতা ছাড়া গল্পটা দারুন, কোথাও হালকা কোথাও খুব গভীরতা খুঁজে পেলাম আপনার গল্পে, থামবেন না চালিয়ে যান সামনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে, সেই ভালোর অপেক্ষায় থাকলাম ,
প্রজ্ঞা মৌসুমী
সবুজটাকে একটু মিস করছিলাম... তবে গল্পটা ভালো লাগল। চরিত্রের আবেগ, রোমান্টিকতা, দুঃখ, দ্বন্দ্ব ছুঁয়ে গেল। মেয়েটাকে অপরাধী বলে মনে হয়নি। যদি সত্যিকারের অপরাধী কেউ হয়, সে হলো...ডেস্টিনি... লেখকের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।